খ ম জুলফিকারঃ সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) এর দরগাহে বার্ষিক উরস উপলক্ষে লৌকিক উৎসব ‘লাকড়ি তোড়া’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিবছর দরগাহের বার্ষিক ওরসের তিন সপ্তাহ আগে- প্রায় ৭০০ বছর ধরে প্রচলিত লাকড়ি সংগ্রহের এ উৎসব পালিত হয়।
আজ বুধবার ‘লাকড়ি তোড়া উৎসবে’ দরগাহ থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে লাক্কাতুরা চা-বাগানের জঙ্গল থেকে লাকড়ি সংগ্রহ করা হয়।
সকাল থেকে হযরত শাহজালাল (রহ.) হাজারো ভক্তরা দরগাহ শরীফে সমবেত হয়ে জোহরের নামাজের পরে মিছিল সহকারে লাকড়ি সংগ্রহে জংগলের উদ্দেশ্যে রওনা হন। সেখানে মিলাদ ও দোয়া অনুষ্ঠানের পর লাকড়ি নিয়ে দরগাহ শরীফে ফিরে আসেন ।
দরগাহ’র মোতাওয়ালি জানান, শাহজালাল (রহ.) এর জীবদ্দশায় এভাবে লাকড়ি সংগ্রহ করে রান্না করা হতো। সেই ঐতিহ্য রক্ষা করে ৭০০ বছর ধরে উরসের তিন সপ্তাহ আগে লাকড়ি তোড়া সম্পন্ন হয়ে আসছে। এসব সংগ্রহ করা লাকড়ি নির্দ্দিষ্ট স্থানে জমা করে রাখা হয়। আর এসব লাকড়ি দিয়েই উরসে শিরনির রান্না করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ৭০০ বছর আগে সিলেট বিজয় দিবসের কয়েক দিন ২৬ শাওয়ালের এই দিনের আগে এক কাঠুরে আসেন হযরত শাহজালাল (রহ.) এর কাছে। কাঠুরে জানান-ঘরে তার বিবাহযোগ্য ৫ মেয়ে রয়েছে। সে কাঠুরে নিচু জাতের হওয়ায় কেউই তার মেয়েদের বিয়ে করতে চাইছে না। এ কথা শুনে শাহজালাল (রহ.) কাঠুরেকে সিলেট বিজয় দিবসে দরগায় আসার কথা বলেন।
পরবর্তী সিলেট বিজয় দিবসে সঙ্গী আউলিয়া,ভক্ত ও আশেকানরা আসলে শাহজালাল (রহ.) সবাইকে নিয়ে লাক্কাতুড়া বাগানে গিয়ে কাঠ সংগ্রহ করেন। ফিরে এসে তিনি উপস্থিত ভক্তদের কাছে জানতে চান তারা আজ কি কাজ করেছে। উত্তরে সবাই বলেন তারা আজ কাঠুরিয়ার কাজ করেছে।
এরপর শাহজালাল সবাইকে কাঠুরের দুঃখের কথা বললে উপস্থিত অনেক ভক্ত কাঠুরের মেয়েদের বিয়ে করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখান থেকে কাঠুরে তার মেয়েদের জন্য বর পছন্দ করেন। এ ঘটনার পর থেকে সাম্য ও শ্রেণী বৈষম্য বিরোধী দিবস হিসেবেও দিনটি পালন করেন ভক্তরা।